।। বাক্‌ ১১৯ ।। মাজুল হাসান ।।






মাজুল হাসানের কবিতা


ভাষা
দেবদারু—ভেতরে অন্তর্লীন নির্জনতা নিয়ে কত যে বলো কথা
সবুজ-অন্ধকার থেকে উবে যায় আরো সবুজ-অন্ধকার ধোয়া
রাগী বর্ণমালা আর সি শার্প কান্নাকে থাকতে দাও পাড়-মাতাল
শেখাও গলধিকরণ। বিস্ফোরণের আগে চিৎকারকেও হতে হয়
                           পাতালকুঠির জমাট
ভুল প্রকাশে শব্দের নেশা কেটে যায়
আক্রোশে বিষাধার
পাথর—আক্রোশ বাঁচাও, তবেই শিখবে আগুন জ্বালাবার কৌশল


গনগনে
১.
ভুলে যাবার জন্যই ফেলে রাখছি সমূহ জরুরী

অগ্নি—তুমি বায়ু থেকে ঠেলে—দাও শীতকাল
প্রত্যাখ্যান ও সর্দির মৌসুমে উল বুনছি পরম

বাৎসল্যে
অগ্রহায়নে আড়াই আর মাঘে ছয় দিন নিখোঁজ
থাকে সূর্য

ওয়াকারে হেঁটে বেড়াচ্ছে অপ্রস্তুত—অচম্বিত চাঁদ
২.
প্রখর রোদে কিশোর নিজেই একটা স্বপ্ন

উল্টো পা'য়ে আসো লাল। তবে সাবধান,
কামভরে তাকিও না রূপসী ডবল ডেকার
সান্দ্র খুঁড়ে বের করো হল্কা
এতো যে তৃষ্ণাঅগভীর কুপের কাছে
খঞ্জনা ও মেঘস্খলন; প্রার্থনা; নিরর্থক?

হেটমুণ্ডু হও কিশোর, সমবয়সী খালাদের
উপহার দাও কচুরিপানা, তীব্র লোডশেডিং
শুধু সুপেয় ভেবে ডুব দিও না কুঁচকিতে

স্বপ্ন—ওখানে বন্ধ ঘড়ি; গোধূম কাস্পিয়ান...


হরিণ

তুলে দিলুম শব্দতবল, বাজাও, দৃশ্যরা বাজুক তুমুল
পোড়া বনস্থালীতে বসে বসে হাসতে পারাটাই জীবন
সারথি তোমার ত্রিশূলতৃণ। তোমার স্মৃতিভ্রষ্ট আতাগাছ
কামঐশে পূর্ণ। কে দেখায় রঙশেকল?
হাঁটো। দৌড়াও। বসো-স্থিত। দ্যাখো লম্ফমান মূর্ধন্য…



পূর্বমেঘ

প্রতিপন্ন করো হে পূর্বমেঘ। বজ্র প্রাপ্য আমার, বিরক্ত করো না
শুধু শুধু বৃষ্টি পাঠিয়ে। নিমিষ ও জ্যোতিবিম্বের মাঝে দোলাও গুল্ম
পুঁইদানাতে জমাট হোক রক্ত-লকেট। মাচায় ফুল। টোকা দাও
টলে পড়ি টকটকে সতেজ। চরপে পোড়া দেহ, চরপে পোড়া
পুংকেশর—ঠাঁয় দাঁড়িয়ে। টোকা দাও। শুধু আতাফল অক্ষত থাক
অনাদিকাল, হে শতচক্ষু আমার…


অদ্বৈতবৃক্ষ

মেঘমোহিত আপাতত এটুকু বলা। স্থির পড়ে আছে প্রেম
জবা। চক্তচোখ। আমি কি তবে শোনাব না দেহকাণ্ডবীণ?
কিভাবে তৈরি হয় মনোমালিন; পৃথক আয়না?
রোজ দেখছি স্ফুটন, তবু দেখছি না—হে জড় ক্রিয়াপদ
হারিয়ে ফেলেছি পাখি ও লাউডগা সাপ-প্রিয় দংশন
সপ্তরিপুর প্রকৃত অর্থ নিয়ে শুয়ে-বসে থাকা, ফেউলাগা
                           গোয়েন্দার মতো
রহস্য—তোমার অদ্বৈতবৃক্ষ চিরকালই অরক্ষিত
প্রতিবেশীর ভিটায় খসিয়ে দেয় ছায়াফল…


হস্তগীত

যতোদিন হস্তগীত ততোদিন শেষ বলে কিছু নাই
তব্দালাগা পা, ত্যক্ত মৌচাক, মিথুনপুষ্প—
সবই হস্তগীতের অনুঘটক। শুধু জানতে হবে দক্ষিণ।
কোন টেপাপুতুলটা ছোঁবে? কোন নির্দেশে বাইবে দাঁড়?
গন্তব্য জরুরি নয়; দিগন্ত হাতছানিই অধিক মনোহর
চৌদিকে দরিয়া, নুনজল, তবু গোপিকানৃত্যই সত্য
অল্পপ্রাণ অন্ধকার কার ভালো লাগে—হে ছন্দপতন
হস্তগীত তুমিই আমার ময়ূরপুস্তক…


হাবাগোবা সুর

এই ক্লিষ্টজীবন, পড়ে থাকা টুকরো রঙিন কাচ, বিভাজক
যা-ই দেখি ভেসে ওঠে হাবাগোবা সুর, নেচে ওঠে হৃদডমরু
কাটা হাত, তবু বাসনারা মন্থনমুখি, পাহাড়ও হাতছানিময়
জেগে থাকো কাকসিন্ধু ভোর, স্নানবাষ্প, মেঘজারুল—
হে ক্লিষ্ট রঙিন কাচ—তোমাতেই ভর করে সপ্তরিপু সুর
হাবাগোবা গান তুমিই শস্যবীক্ষণ; প্রকাশ্য অহম আমার…


দীর্ঘ ঈ

আমাকে দ্যাখো পাঁচিলে হেঁটে বেড়ানো বেড়াল। ঠোঁটে দুগ্ধঘ্রাণ
অক্ষত আজও। এবং নারী। হে দীর্ঘ ঈ-কার তুমি আবক্ষ জলপিপে
নারী আমাকে দ্যাখো। দীর্ঘ ঈ-কার আমাকে মহাপ্রাণ দণ্ড দাও
দ্যাখো দীর্ঘ পয়ারের মতো গাছে গাছে উড়ছে পালকের সেমিজ
যেমন—কাকেরা আছে বলে ছেলেপুলেরা চিনতে শিখলো পাখি
তোমাকে দেখলেই চতূর্থ লোকালয়, বুঝি শহর এখনও নির্মাণাধীন
শহরে সবারই থাকে ধুম করে পোষা বেড়াল মরে যাওয়ার স্মৃতি


দেহকাণ্ডবীণ

লেলিহান চুমু শীতলতার মানে তুমিই বোঝ শুধু
তুমিই প্রকৃত অস্থিবাদক। বাক্যনীড় থেকে সতত
ঈর্ষা করি তোমায়
লালাতন্তু-লালাতন্তু বলে ডাকে বৃষ্টিরহিত দিন
অতঃপর বিজলি চমক, লেপ্টে যায় জামা
আলোকসঙ্গত-আলোকসঙ্গত
রূপ ও শৃঙ্খলের মানে আমি জানি—হে শস্যকারাগার


নূর

মানুষ-গাছ সব ক্লিব, এমনকি চোখও, শুধু দৃষ্টিটা প্রাণবাচক
অম্বরচুমা জলধি, আরশিপৃষ্ঠ, তারি মধ্যখানে তারাগাছ
পাতা নড়ছে একটি—সবুজ বিদ্রোহ—শুধু দৃষ্টিটা গতিবাচক
পালতোলা নৌকার আগে তটরেখা ছুঁয়ে দেয় চোখ
পৃথিবীর সমস্ত জ্ঞানগ্রন্থ আদতে একেকটি চোখের মালা
সেথায় লেখা:
চোখের চাহনিতে পাহাড় সুরমা হওয়ার রোমাঞ্চ



শরীর

মাথা দিয়ে মেঘ-টার্বাইন ওড়ে, তলপেটে বিদ্যুৎ

৩ ফোটা বেনোজলসহ ঘুরছি ১ ফোটা আমি
দ্যাখো কিংকর্তব্যবিমূঢ় গোলাপ; মুগুরমঞ্জুরি

'ফেরা' এই ২ অক্ষরের মাঝে বেমালুম লুকিয়ে থাকে
ঘননীল পূর্বজন্ম এবং সমুদ্রযাত্রার রোমাঞ্চ; উৎকণ্ঠা...

সমুদ্র ১টি ডাকঘর, নক্ষত্রকে বলছি স্মৃতি-উদ্ধারক পোশাক
বন্ধু, সুখী মানুষের কনসেপ্টই জগতে সবচাইতে ক্ষতিকর

ফুঁ দিলামদুলে উঠলো অ্যালিসের ল্যারিন্থ
কাম ও বার্হস্পত্য দর্শনে দুলে উঠছে রোববার

শরীর এখানেও একক ও স্থির...







মাজুল হাসান/ পরিচিতি

মূলত কবি। গল্প ও গদ্য লেখেনকরেন অনুবাদও; তবে সবচেয়ে পছন্দ করেন আলস্য উদযাপন।

জন্ম ১৯৮০’র ২৯ জুলাই, বাংলাদেশের দিনাজপুরের উপশহর এলাকায়। পড়াশুনা দিনাজপুর জিলা স্কুল, নটরডেম কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স।

পেশায় সাংবাদিক। বর্তমানে যমুনা টেলিভিশনে বার্তা সম্পাদক হিসেবে কর্মরত। পাশাপাশি শিল্প-সাহিত্যের ওয়েবজিন পরস্পর ডট কম- এর অন্যতম সম্পাদক তিনি।

প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ:
বাতাসের বাইনোকুলার (জেব্রাক্রসিং প্রকাশ, ২০১৭), মালিনী মধুমক্ষিকাগণ (২০১৪), ইরাশা ভাষার জলমুক (২০১৬)

প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ:
টিয়ামন্ত্র (২০০৯), নাগর ও নাগলিঙ্গম (২০১২)

অনুবাদ:
মিস্টার লিটল প্রোস পোয়েম (রাসেল এডসনের কবিতা), ক্রিস্তো রেদেন্তর ও ৪টি পামগাছ (ব্রাজিলের ৪ কবির কবিতা)

সম্পাদনা:
প্রথম দশকের ছোটকাগজ বাবুই

ইমেইল: majulhassan@gmail.com




2 comments:

  1. ♥'পোড়া বনস্থলীতে বসে বসে হাসতে পারাটাই জীবনন।'
    ♥'গন্তব্য জরুরি নয়;দিগন্ত হাতছানিই অধিক মনোহর।'
    ♥'দ্যাখো দীর্ঘ পয়ারের মতো গাছে গাছে উড়ছে পালকের সেমিজ।'
    ♥'পালতোলা নৌকার আগে তটরেখা ছু্ঁয়ে দেয় চোখ।'
    ♥'পৃথিবীর সমস্ত জ্ঞানগ্রন্থ আদতে একেকটি চোখের মালা।'

    পঙক্তিগুলো বেশ ভালো লেগেছে, কবি।

    ReplyDelete
  2. 'ভুল প্রকাশে শব্দের নেশা কেটে যায়।' Kobi Jodi ei sotyo jene felte paren, godyokar Keno prayosoi byartho! Valo laglo prokas prokoron, besh koyekti Lekha.

    ReplyDelete