।। বাক্‌ ১১৯ ।। তুফান চট্টোপাধ্যায় ।।


মানবিকতা কি অবলুপ্তির পথে?


পরোপকারী আর মানবিক দুটো কিন্তু এক জিনিস নয়। পরোপকার করার সময় দ্বিতীয়জনের সবসময় উপকার করাটাই আপনার মূল উদ্দেশ্য। আর মানবিক হবার সময় আপনাকে নিজের মানবিকতা বজায় রেখে সঠিক কাজ করাটাই আপনার লক্ষ্য, এতে পরের উপকার হতেও পারে আবার নাও পারে। যখন মানবিকতা সমাজের কারো কাজে লাগে তখন সেটা হয় পরোপকার।

কোনো মানুষের পদক্ষেপ গুলো যদি আমার আপনার কাছে মানবিকতার পরিচয় রাখে তবে বাকিদের কাছে সেটা অমানবিকও হতে পারে।

যেমন ধরুন একটা  শিশু এসে কিছু ভিক্ষে চায় আর এক ভদ্রলোক
তাকে ভিক্ষের বদলে তাড়িয়ে দেয়তাহলে দেখা গেল লোকটি কোনো পরোপকার করছে না ও তাকে আমরা অমানবিক বলে দেগে দিলাম। অথচ যদি এমন হয় যে লোকটি নেহাতই এক ভাল মানুষ, সেদিন বাড়ি থেকে মুড খারাপ করে বেরিয়েছিল, অথবা ধরুন ভিক্ষা চাওয়া শিশুটি তার কাছে তিন নম্বর, এর আগে দুটিকে দক্ষিণা দিয়ে এসেছে সে। তাহলে কি দাঁড়াল শেষ শিশুটি তার কাছ থেকে কোনো উপকার না পেয়ে সে অমানবিক হল বাকী দুটি তার কাছে উপকার পেয়ে তাকে জানল মানবিক

আপনি একজন শিক্ষক আর আপনার স্কুলে গিয়ে আপনি দেখলেন এক ছাত্র মেরে  আরেকজনের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে । শিক্ষকের দায়িত্ব অনুযায়ী আপনি ছেলেটিকে টিসি দিয়ে দিলেন। এখন আপনি জানেন যে ওকে স্কুল থেকে বের করার মূল উদ্দেশ্য ওকে পড়াশোনা করতে না দেওয়া নয়। বরঞ্চ ওকে পরোক্ষ ভাবে বোঝানো যে ওকে অন্য কোন একটা ভালো স্কুলে ভর্তি করা আর ঘরেও কড়া শাসনে রাখা ওরকম দুষ্টুমির জন্য। আপনার চোখে মানবিকতায় আপনি পাশ। কিন্তু
, ছাত্রের বাবা মা এর কাছে স্যার টা খারাপ, একটু মানবিকতা দেখাতেও পারলেন না। ছাত্রের কাছেও একই। আপনি তার কোনো উপকার ই করলেন না। পৃথিবীর খাতায় আবার মানবিকতার পরিমাণ শূন্য।এমন অজস্র উদাহরণ দেওয়া যেতেই পারে।

আজকের সভ্য সমাজে ঘুরে বেড়ান আপনার মনের অজান্তেই একসময় চিন্তা তৈরি হবে, এই পৃথিবীতে আর মানবিকতা নেই
সে জায়গায় গিয়ে আপনি উপলব্ধি করুন দেখবেন প্রত্যেকের নিজের কিছু প্রয়োজন মেটানোর জন্য কাজ করেই চলেছে। এখন প্রসঙ্গতই মানবিকতার এ ব্যাপারে ভূমিকা আছে না নেই সেটা জানার প্রয়োজন রয়েছে কিন্তু একটা জড়বস্তুর জগতে আমরা সজীবরা যে মানবিকতা দেখাই কিনা সেটাই বা বিচার করবে কে ?

হয়তো
আমার আপনার চোখে দেখার মতো পর্যায়ে নেই


No comments:

Post a Comment