সমর
রায়চৌধুরী-র দুটি কবিতা
প্রস্তাব
- আমি তোমাকে...
- থাক্। জানি । বলতে হবে না
- তুমি কি আমাকে...
- বলবো না, বুঝে নাও-
সব কথা
বলতে হয় না
কিংকং
কিংকং এসে ছিল কাল রাতে। টের পাচ্ছিলাম ঘুমের
ভেতর তার আভাগার্দ কার্যকলাপ। শুনতে পাচ্ছিলাম মট্মট্ কড়মড়, কুড়মুড় আওয়াজে এই
বাড়ি, যার ভেতর আমি ঘুমিয়ে আছি, যেন এক রসালো মুড়ো, সে চিবিয়ে চলেছে অবিরাম। তার
মুখ নিঃসৃত লালা এই রাত। তার দংশনে রক্তাক্ত, চূর্ণ-বিচূর্ণ কাঠের দরজা জানলা,
ঘরের পিলার; থামগুলি সে খাচ্ছে পাকা কলার মতো। তার
দাঁত ঘষার শব্দ ও চর্বণে ঘরের ছাদ দেওয়াল ও আসবারপত্রগুলি কঁকিয়ে উঠছে। নখ দিয়ে
আঁচড়ে চলেছে ঘরের সমস্ত মার্বেল পাথর, টাইলস্, কাঁচ, ঘুম এবং চরাচর। নখরাঘাতে
ঠিকরে পড়েছে স্ফুলিঙ্গ, অগ্নিকণা জোনাকি হয়ে উড়ছে। কর্কশ জিব দিয়ে সে চেটে চলেছে
যেখানে যত রং; গাছের পাতা, ফুল ও চামড়া, সে বর্ণহীন করে দিচ্ছে; চুষে চলেছে ব্রেন,
স্মৃতির মজ্জারস। কিন্তু অজানা, কি এক আশ্চর্য ও অলৌকিক উপায়ে সে তার ওই বিধ্বংসী
কার্যকলাপের মধ্যেও আমাকে রেখে দিয়েছে জীবিত ও সম্পূর্ণ অক্ষত! হয়তো লক্ষ্য, আমার উপলব্ধি
আরও উজ্জীবিত ও সংবেদনকে আরও প্রখর করে তোলা যাতে আমি ভয় পাই ও মুষড়ে পড়ি এবং
প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তার ভয়ঙ্করতা ও সংহারলীলাকে প্রচার করি। কিন্তু
ভয় না পেয়ে বরং তার পাগলামিকে গোপনে উপভোগ করতে করতে আমি পড়ে থাকি নিথর, মড়ার মতো।
হতাশায় ক্রোধে তাই আমাকে একটা লাথি মেরে সে নিমেষে উধাও হয়ে গেলে আমি গুপ্ত কুঠুরি
ও লুকানো শিশি-বোতলের ভেতর থেকে বের করে আনি আমার অর্দ্ধভুক্ত আগুন, জলের কংকাল ও
ছিবড়ে হয়ে যাওয়া ঘুম; আয়নার ত্বক, গ্রন্থসমূহের রক্ত ও অশ্রু নিয়ে পুনরায় প্রস্তুত
ও অপেক্ষায় থাকি পরবর্তী কিংকং হানার জন্য, কারণ আমি জানি দুঃসহ কিংকং-ই হচ্ছে আমার
ছায়া-সুনিবিড় স্থিতাবস্থা ও এই শিল্পীত মসৃণতা ভেঙে অভিনব দৃশ্যপটের রচয়িতা; চাই
সে আবার আসুক আর দ্যাখাক – কিংকং লেলিহান শিখার ওপর অবিরাম ঝরে পড়া এক তুমুল ও অনন্য
ঝড় বৃষ্টির কিংকং, বজ্র!
চিত্রঋণ- Marcel Caram
প্রথম কবিতাটা অসমরীয়।
ReplyDeleteকিংকং
ReplyDelete