।। বাক্‌ ১১৯ ।। অনুপম মুখোপাধ্যায় ।।



ম্যাজিশিয়ানের আসল চ্যালেঞ্জ হল আরেক ম্যাজিশিয়ানকে মুগ্ধ করা। দর্শককে মুগ্ধ করা খুব কেরামতির ব্যাপার নয়।
পরিণত পাঠক কাকে বলে বলুন তো? জেমস জয়েসের পাঠক গোপাল ভাঁড় পড়তে পারে, কিন্তু গোপাল ভাঁড়ের পাঠক জেমস জয়েস পড়তে পারে না, তার গাঁঢ় মারা যায়, এটাই হল পরিণতি। বিশেষ সাহিত্যের জন্য বিশেষ পাঠক পরিণত হয়। এবং, বিশেষ সাহিত্যের জন্য বিশেষ পাঠকের মধ্যেই চাহিদা জেগে থাকে। আশ্চর্য হল, গদ্যের ক্ষেত্রেও পাঠকের এমন চাহিদা দেখা যায়। সমকালীন উপন্যাসেও এরকম ‘ফ্লাওয়ারি’ বিন্যাস চোখে পড়ছে, যেন এভাবে লিখেই কমলকুমার বা অমিয়ভূষণ মজুমদারদের স্তরে ওঠা যাবে। কিন্তু, ‘শিনে মেঁ হাজারোঁ ছেদ কর দুঙ্গা’ বললেই যেমন মহৎ অভিনেতা হওয়া যায় না, হাততালি অবশ্যই পাওয়া যায়, সামুরাই সোর্ডের মতো অভ্রান্ত শব্দ প্রয়োগ না থাকলে, এক কোপে খণ্ডিত করে দেওয়ার মতো শানিত বাক্যবিন্যাস না থাকলে গদ্যের সেই স্তরেও ওঠা যায় না। কবিতা আর গদ্যের মধ্যে আদৌ কি কোনো ভেদ আছে? ওয়াটারটাইট কম্পার্টমেন্ট আছে? মোটেই না।

কিন্তু, আসল কথাটা হল, শানিত বাক্যবিন্যাস এবং অভ্রান্ত শব্দপ্রয়োগের সেই শক্তির সমঝদার কি আছে এখন? খুব কম আছে। আঙুলে গোনা যায়। এই সময়টা শিল্পরসিকদের দুঃসময়। অবিশ্যি কোনো সময়ই সমকালীন শিল্পের স্বর্ণযুগ ছিল না। যে কোনো সময়েই সমকালীন শিল্পীকে অবহেলা আর অবজ্ঞা আর অজ্ঞান সইতে হয়েছে। তবু এখন পরিস্থিতিটা কাজের পক্ষেও বেশ কঠিন। কেন? কারণ পরিস্থিতিটাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কারা লেখক, কারা পাঠক, সব ঘেঁটে ঘ হয়ে গেছে এই ২০১৮-র সূচনায়। এবং শতাব্দী এর মধ্যেই সাবালিকা হল। ভোটটা সে কাকে দেবে? প্রশ্নটা প্রশ্নই থাক।